লেক্সিংটন, কেন্টাকি
লেক্সিংটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও সমগ্র দেশের ষাটতম বৃহত্তম শহর। এটি বিশ্বের "অশ্ব-রাজধানী"(Horse capital) নামে পরিচিত। এটি কেন্টাকির ব্লুগ্রাস অঞ্চলে অবস্থিত। এখানে কেন্টাকি অশ্ব-পার্ক, রেড মাইল ও কিনল্যান্ডের মতো বিখ্যাত ঘোড়দৌড় মাঠ, ট্রানসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্টাকি বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্লুগ্রাস কমিউনিটি কলেজ অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীর হার বিবেচনায় লেক্সিংটন যুক্তরাষ্ট্রের দশম বৃহত্তম শহর। শহরের ৩৯.৫% বাসিন্দার স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে। শহরের ৯২.২% বাড়িতে ব্যক্তিগত কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।[১][২]
আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, লেক্সিংটনের জনসংখ্যা ৩,২৩,১৫২। আয়তন বিবেচনায় লেক্সিংটন যুক্তরাষ্ট্রের ২৮-তম বৃহত্তম শহর। শহরটি ফেয়েট কাউন্টিতে অবস্থিত। শহরটি মেয়র-কাউন্সিল মিশ্র সরকারপদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। শহরের সিটি কাউন্সিল নির্বাচনী এলাকা থেকে ১২ জন সদস্য ও সমগ্র লেক্সিংটন থেকে ৩ জন সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত ব্যক্তি সহকারী মেয়র পদে নিযুক্ত হন।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]শহরটি বরাবরই উর্বর ভূমি ও জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ ছিল। বিভিন্ন আদিবাসী জাতি বহু বছর ধরে লেক্সিংটনে বসবাস করেছে।
লেক্সিংটন ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিনকাসল কাউন্টির অংশ ছিল। কেন্টাকি রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনের ১৭ বছর পূর্বে,১৭৭৫ সালের জুনে এর নামকরণ করা হয়। উইলিয়াম ম্যাককনেলের নেতৃত্বে সীমান্ত এলাকার একদল লোক এল্কহর্ন খাঁড়িতে বসতি স্থাপন করেন। ১৭৭৫ সালের ১৯ এপ্রিল লেক্সিংটন ও কংকর্ডের যুদ্ধে উপনিবেশবাদীদের বিজয়ের সংবাদ শুনে তারা শহরটির নাম দেন "লেক্সিংটন।" ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের লেক্সিংটনের নামে অনেকগুলো শহরের নামকরণ করা হয়। এগুলোর মধ্যে কেন্টাকির লেক্সিংটন-ই প্রথম।[৩] ব্রিটিশ ও আদিবাসীদের মধ্যে সংঘাতের কারণে বসতি স্থাপনে চার বছর বিলম্ব হয়।
১৭৭৯ সালে আমেরিকান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় হ্যারড দুর্গ হতে কর্নেল রবার্ট প্যাটারসন ও তার ২৫ জন সঙ্গী এখানে আগমন করেন এবং একটি ক্ষুদ্র দুর্গ নির্মাণ করেন। ১৭৮০ সালে একে ফেয়েট কাউন্টির সদর দপ্তর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
১৭৮২ সালের ৬ মে ভার্জিনিয়া বিধানসভা শহরটির অনুমোদন দান করে। ১৭৯০ সালে এখানে পিটার ডুরেট প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান ব্যাপটিস্ট চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন।[৪] এটি কেন্টাকির প্রাচীনতম ও যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রাচীনতম আফ্রিকান-আমেরিকান ব্যাপটিস্ট চার্চ।[৫]
কবি জোসিয়াহ এস্পি এক চিঠিতে লেক্সিংটনের সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধির প্রশংসা করেন। এই চিঠি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই শহরটিকে "পশ্চিমের এথেন্স" রূপে বর্ণনা করেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে অধিবাসী জন ওয়েসলি হান্ট পশ্চিমাঞ্চলের প্রথম দশ লক্ষপতি হন। ১৮৩৩ সালে এখানে কলেরা মহামারী দেখা দেয়। লেক্সিংটনের ৫,০০০ বাসিন্দার মধ্যে ৭০০ জন-ই কলেরায় মৃত্যুবরণ করেন।[৬] ১৮৪৮-৪৯ সাল ও ১৮৫০ এর দশকে এখানে পুনরায় কলেরা মহামারী দেখা দেয়।
তামাক ও গাঁজা চাষের জন্য এখানকার আবাদকারীরা দাস নিযুক্ত করেন। ১৮৫০ সালে বাসিন্দাদের এক-পঞ্চমাংশ ক্রীতদাস ছিলেন। ১৮৫০ সালে ব্যাপটিস্ট চার্চের সদস্যসংখ্যা ছিল ১,৮২০; সদস্যসংখ্যার দিক দিয়ে এটি কেন্টাকির বৃহত্তম চার্চ ছিল।
অনেক বিখ্যাত আমেরিকান এখানে বসবাস করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন - আব্রাহাম লিংকন, জেফারসন ডেভিস,জন হান্ট মর্গান, জন সি ব্রেকিরিঞ্জ ও হেনরি ক্লে। লিংকনের স্ত্রী মেরি টড লিংকন এখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
ঊনবিংশ শতকে এখানকার অনেক বাসিন্দা টেনেসি ও মিজুরি চলে যান।
১৯১৭ সালে আবাসন নিয়ে লেক্সিংটনের কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের মধ্যে বিরোধ উপস্থিত হয়। এর ফলে ঐ বছরের ১ সেপ্টেম্বর তাদের মধ্যে দাঙ্গা দেখা দেয়। এ সময় এ অ্যান্ড এম মেলা চলছিল, যা আফ্রিকান আমেরিকানদের সবচেয়ে বড় মেলা ছিল। এতে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী হস্তক্ষেপ করে এবং ব্যাপক সহিংসতা দেখা দেয়।
১৯২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শ্বেতাঙ্গ নারী জেনেভা হ্যান্ডম্যানকে হত্যার অভিযোগে কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ উইল লকেটের বিচারকার্য সম্পন্ন হয়। এসময় কৃষ্ণাঙ্গরা আদালতভবনের সামনে ভিড় করে ও ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। গভর্নর এডউইন পি মরোর নির্দেশে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী এখানে আগমন করে। তারা কৃষ্ণাঙ্গদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে ছয়জন নিহত ও পঞ্চাশজন আহত হন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফ্রান্সিস সি মার্শাল এখানে সামরিক আইন জারি করেন। ১১ মার্চ তার ফাঁসি হয়।
১৯৩৫ সালে লেক্সিংটনে মাদকাসক্তি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয়।[৭]
ভূগোল
[সম্পাদনা]লেক্সিংটনের আয়তন ২৮৫.৫ বর্গমাইল। এর ২৮৪.৫ বর্গমাইল স্থল ও ১.০ বর্গমাইল জল।
ফোর্বস পত্রিকার বিশ্বের সবচেয়ে পরিষ্কার শহরগুলোর তালিকায় লেক্সিংটন দশম স্থান অধিকার করেছে।[৮]
লেক্সিংটন আর্দ্র উপক্রান্তীয় এলাকায় অবস্থিত।[৯] শহরে চারটি ঋতু দেখা যায়। জানুয়ারি মাসে গড় তাপমাত্রা ৩২.৯ ও জুলাই মাসে গড় তাপমাত্রা ৭৬.২ ডিগ্রি ফারেনহাইট। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ৫৫.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। [১০] বছরে গড়ে ৪৫.১ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়।
জনমিতি
[সম্পাদনা]২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী লেক্সিংটনের জনসংখ্যা ২,৯৫,৮০৩। শহরে ৬২,৯১৫টি পরিবার বসবাস করছিল। শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩৫৩.৫ জন। বাসিন্দাদের ৭৫.৭% শ্বেতাঙ্গ, ১৪.৫% কৃষ্ণাঙ্গ, ০.৩% আদিবাসী, ০.০৩% প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও ৩.২% এশীয়। বাসিন্দাদের ৬.৯% হিস্পানিক অথবা লাতিনো।
শহরের পরিবারগুলোর গড় আয় ৫৩,২৬৪ ডলার। পুরুষদের গড় আয় ৩৬,১৬৬ ডলার ও নারীদের গড় আয় ২৬,৯৬৪ ডলার। শহরের মাথাপিছু আয় ৩০,০৩১ ডলার। ৮.২% পরিবার ও ১৮.৯% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদের ১৪.৩% এর বয়স ১৮ এর নিচে ও ৮.৬% এর বয়স ৬৫ এর সমান বা বেশি।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "U.S. Census Bureau QuickFacts: Lexington-Fayette, Kentucky"। www.census.gov। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ "Most-Educated Cities in the United States - MSN Encarta"। web.archive.org। ১৮ অক্টোবর ২০০৯। ২৮ অক্টোবর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ Ramsay, Robert L. (২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩)। "Our Storehouse of Missouri Place Names"। University of Missouri Press। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ – Google Books-এর মাধ্যমে।
- ↑ "Lexington Kentucky --First African Baptist Church-- National Register of Historic Places Travel Itinerary"। www.nps.gov। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ "A Brief History of the First Baptist Church, Lexington, Kentucky - (Black) - By H. E. Nutter, 1940"। baptisthistoryhomepage.com। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ "Christ Church Episcopal, Lexington, Kentucky -- National Register of Historic Places Travel Itinerary"। www.nps.gov। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ "History of the Addiction Research Center"। web.archive.org। ২৫ আগস্ট ২০০৯। Archived from the original on ২৫ আগস্ট ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ "In Pictures: The World's Cleanest Cities"। Forbes। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১০ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ Team, National Weather Service Corporate Image Web। "National Weather Service Climate"। w2.weather.gov। ১৩ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০।