(Translated by https://www.hiragana.jp/)
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানির ইতিহাস - উইকিপিডিয়া বিষয়বস্তুতে চলুন

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানির ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা কুউ পুলক (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৭:২১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল (template+)। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় জার্মান সাম্রাজ্য একটি কেন্দ্রীয় শক্তি হবার পরেও তারা যুদ্ধে হেরে যায়। তাদের অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি মিত্রবাহিনী সার্বিয়ার সাথে যুদ্ধ ঘোষনার পর পরই এই সংঘাত শুরু হয়। জার্মান সৈন্যরা মিত্রবাহিনীর সাথে পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় প্রান্তে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যদিও ১৯১৪ এর অল্পকিছু সময় যখন পূর্ব প্রুশিয়া আক্রমন হয়, সে সময় ছাড়া যুদ্ধের পুরোটা সময় ব্যাপক আক্রমণ থেকে জার্মান রাজ্যগুলো তুলনামূলক ভাবে নিরাপদেই ছিল। রয়্যাল নৌবাহিনীর আরোপিত একটি পাকা পোক্ত অবরোধের কারণে শহর গুলোতে খাবারের সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে ১৯১৬-১৭ এর শীতে যেটি টুরনিপের শীত নামে পরিচিত। যুদ্ধের শেষে, জার্মানির পরাজয় চরম অসন্তোষ ১৯১৮-১৯ সালের জার্মান বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটায়, যা রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে ওয়েমার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।

সার সংক্ষেপ

জার্মান জাতি ১৯১৪ এর সেই যুদ্ধে মিশ্র আবেগের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে, ঠিক যে ভাবে ইউরোপের অন্যদেশ গুলোর জনগন জানিয়েছিল; সে সময়কার প্রত্যক্ষদর্শী জাতি যারা ১৯১৪ এর মূল চালিকা শক্তি হিসেবে পরিচিত, পরবর্তীতে বহু চ্যলেঞ্জের সম্মুখীন হয়। [১] জার্মান সরকার, জানকার্সের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভেবেছিল এই যুদ্ধ জার্মানির বিরোধ প্রতিযোগী ফ্র্যান্স, রাশিয়া এবং ব্রিটেনের সাথে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাবে। যুদ্ধের শুরুটা জার্মানির কাছে এমন ছিল যে তাদের জাতিকে রক্ষার শেষ সুযোগ "সূর্যের নিচে আমাদের জায়গা" যেমনটা তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বার্নহার্ড ভন ব্লো যেমনটা রেখেছিলেন। আর সেটিও জনগন জাতীয়তাবাদ হিসেবে সমর্থন করার জন্যে তৈরি ছিল। কায়সার এবং জার্মান সংস্থা আশা করেছিল যে যুদ্ধটি জনগণকে রাজতন্ত্রের দিকে উদ্ভুদ্ধ করবে এবং জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নাটকীয় বিকাশের ফলে উদ্ভূত হুমকিকে কমিয়ে দেবে। যারা যুদ্ধের আগে রিকস্ট্যাগ এ কায়সারের সবচেয়ে সোচ্চার সমালোচক ছিল। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সদস্যপদ থাকা সত্ত্বেও, জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ইম্পেরিয়াল সরকারের সাথে তার মতবিরোধের অবসান ঘটায় এবং যুদ্ধের প্রয়াসকে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক নীতিগুলি লঙ্ঘন করে।

খুব দ্রুতই প্রতীয়মান হয় যে জার্মানির কয়েক মাসের বেশি যুদ্ধ চালানোর জন্য প্রস্তুতি ছিল না। প্রথমদিকে, যুদ্ধকালীন সময়ে অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কোন পদক্ষেপই নেয়া হয়নি এবং এর ফলে জার্মান যুদ্ধ কালীন সময়ে অর্থনৈতিক অবস্থা ছন্ন ছাড়া অবস্থায় থাকে। জার্মানি খাবার এবং কাঁচামাল আমদানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল, সেটিও জার্মানির ব্রিটিশ অবরোধ এর ফলে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। খাদ্যের মূল্য প্রথমে সীমিত রাখা হয় পরে রেশন পদ্ধতি চালু করা হয়। ১৯১৫ এর দিকে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন শূকর গনহারে মারা হয় তথাকথিত শোয়াইনমর্ডে শুধুমাত্র খাবার এবং শস্য সংরক্ষণের নাম করে। ১৯১৬/১৭ এর শীতকে "টুরনিপ শীত" বলা হয় কারণ আলুর ফলন কম ছিল এবং মানুষজন জীব জন্তুর খাবার খেয়েছিল, তার মধ্যে জঘন্য স্বাদের শালগমও ছিল। ১৯১৪ সালের আগস্ট থেকে ১৯১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত যুদ্ধ চলাকালীন, অপুষ্টি ও ক্লান্তি ও রোগ ও হতাশার উচ্চ হারে যুদ্ধ বন্ধ থাকাকালীনও অতিরিক্ত মৃত্যুহার বেড়ে লোক সংখ্যা দাঁড়ায় ৪,৭৪,০০০ জন।[২][৩]

১৯১৪-১৫

জার্মান সৈন্য বাহিনী পশ্চিম ফ্রন্টে শ্লিফেন পরিকল্পনার পরিবর্তিত একটি পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে যুদ্ধ শুরু করে, যেটি জার্মান সীমান্তে ফরাসি সেনাবাহিনীকে ঘিরে ফেলার আগে নিরপেক্ষ বেলজিয়ামের মাধ্যমে দ্রুত ফ্রান্সকে আক্রমণ করার জন্য সাজানো হয়েছিল। বেলজিয়ানরা পাল্টা যুদ্ধ প্রতিহত করে এবং নিজেরাই নিজদের রেল চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে রাখে যাতে করে জার্মানদের দেরী হয়। জার্মানরা এটা ঘুণাক্ষরেও আশা করেনি যার ফলে দেরী তাদের হয়েই যায়। আর এর জবাব দেয় জনসাধারণের উপর নিয়মতান্ত্রিক ভাবে প্রতিশোধ নিয়ে। প্রায় ৬,০০০ এর মত সাধারণ মানুষ হত্যা করে তার মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল সেই সাথে ধ্বংস করে প্রায় ২৫,০০০ ঘর বাড়ি।[৪] পরিকল্পনা মতে প্যারিসে একত্রিত করার জন্য জার্মানরা ডান দিকে অগ্রসর হয় আগাতে থাকে এবং প্রাথমিকভাবে, জার্মানরা খুব সফল হয়েছিল, বিশেষ করে সীমান্ত যুদ্ধে (১৪-২৪ আগস্ট)। সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখের মধ্যে, ব্রিটিশ বাহিনীর সহায়তায় ফরাসিরা প্রথম যুদ্ধে (৫-১২ সেপ্টেম্বর) প্যারিসের পূর্ব দিকে জার্মান অগ্রগতি থামিয়ে দেয়। এই যুদ্ধের শেষ দিনগুলো পশ্চিমে খন্ড যুদ্ধ সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয়। ৭ আগস্ট মুলহাউস যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মানিতে ফরাসি আক্রমণ সীমিত সাফল্য লাভ করে।[৫]

পূর্ব দিকে, শুধুমাত্র এক দল স্থল ভাগের সৈন্য পূর্ব প্রুশিয়াকে রক্ষা করে এবং যখন রাশিয়া এই অঞ্চলে আক্রমণ করে তখন এটি পশ্চিম ফ্রন্টের উদ্দেশ্যে জার্মান বাহিনীকে ঘুরিয়ে দেয়। জার্মানি সম্মিলিতভাবে ট্যানেনবার্গের প্রথম যুদ্ধ (১৭ আগস্ট - ২ সেপ্টেম্বর) নামে পরিচিত একটি ধারাবাহিক যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত করে, কিন্তু এই ঘুরিয়ে দেয়া জার্মান জেনারেল স্টাফ দ্বারা অনুমেয় ছিল না ফলে রেল প্রধান থেকে অগ্রিম অপর্যাপ্ত গতি সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় শক্তি একটি দ্রুত বিজয় অগ্রায্য করে এবং দুই দিকেই যুদ্ধ করতে বাধ্য করে। জার্মান সেনাবাহিনী ফ্রান্সের অভ্যন্তরে একটি ভাল রক্ষণাত্মক অবস্থানে যেতে তার পথে লড়াই করে যাচ্ছিল এবং স্থায়ীভাবে ২,৩০,০০০ ফরাসি এবং ব্রিটিশ সৈন্য নিজেদের হারানোর চেয়ে বেশি অক্ষম ছিল। এতসব কিছু সত্ত্বেও, যোগাযোগ সমস্যা এবং বিতর্কিত আদেশ এবং সিদ্ধান্তের কারণে জার্মানিকে একটি তাড়াতাড়ি বিজয় পাওয়ার সুযোগ এনে দেয়।

১৯১৬

১৯১৬ সাল পশ্চিম সম্মুখে দুটি বিশাল যুদ্ধের জন্য উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে ভার্দুন এবং অন্যটি সোমমে। দুটি যুদ্ধই পুরো বছর জুড়ে চলেছিল আর তা থেকে তেমন কোন কিছুই অর্জন করা যায়নি। বরং দুটি দলেই ভাল কিছু সৈন্য হারিয়ে ফেলে। ২,৮০,০০০ জার্মান এবং ৩,১৫,০০০ ফরাসি অহত যোদ্ধা নিয়ে ভার্দুন হয়ে আধুনিক প্রতিরক্ষা অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে প্রতীয়মান হয় হত্যাকারী শক্তি রুপে। অপর দিকে সোমমে জার্মান আহতের সংখ্যা ৪,০০,০০০ জনর এবং মিত্র পক্ষের আহতের সংখ্যা ৬,০০,০০০। ভার্দুনে, জার্মানরা ফরাসিদের প্রধান দিক আক্রমন করে কারণ তারা ভেবেছিল সেটি দুর্বল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ফরাসিরা তাদের জতিগত গর্ব ধরে রাখার জন্যেই লড়ে যায়। সোমমে ছিল বহুজাতিক পরিকল্পনার একটি অংশ, যেটি মিত্রবাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমন করতে থাকে একের পর এক। রাশিয়ার গ্র্যান্ড "ব্রাসিলভ আক্রমণ" এর ফলে জার্মানদের দুর্ভাগ্য আরও জোরদার করে, যা আরও সৈন্য এবং মূলধন নষ্ট করে। যদিও পূর্বাঞ্চলীয় অবস্থানটি স্থবির হয়ে পড়েছিল এবং জার্মানি তাদের মিত্রদের তুলনায় ৭,৭০,০০০ এর মধ্যে ১,৫০,০০০ কম হতাহতের শিকার হয়েছিল, একই সাথে ভার্দুনের প্রতিনিয়ত আক্রমন জার্মান সেনাদের চাপে ফেলে সোমমে আক্রমনে প্রলোভিত করে। জার্মান বিশেষজ্ঞরা সোমমের ঘটনা নিয়ে বিভক্ত হয়ে যায়। কেউ কেউ বলেছিলেন যে এটি একটি স্থবির হবার লক্ষণ, তবে বেশিরভাগ এটিকে ব্রিটিশদের বিজয় হিসাবে দেখেন এবং দ্বিমত করেছিল যে জার্মান মনোবল স্থায়ীভাবে হ্রাস পেতে শুরু করে এবং কৌশলগত উদ্যোগটি বিফলে যেতে থাকে।[৬]

১৯১৭

১৯১৭ সালে জার্মান সেনাদের গোলা নিক্ষেপ করার একটি দৃশ্য।

১৯১৭ সালের শুরুর দিকে এসপিডি নেতৃত্ব তার যুদ্ধবিরোধী বামপন্থীদের তৎপরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল যা সজিয়ালডেমোক্র্যাটিচে আরবিটসমেইনস্যাফ্ট (এসএজি, "সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক ওয়ার্কিং গ্রুপ") হিসাবে সংগঠিত ছিল। জানুয়ারীর ১৭ তারিখে তারা তাদের বহিষ্কার করে এবং ১৯১৭ সালের এপ্রিলে বামপন্থী জার্মানির ইন্ডিপেন্ডেন্ট সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি গঠন করে (ভাষা: জার্মান: উনাভাঙ্গিগে সোজিয়ালডোমোক্রিটিশ পার্টেই ডয়চল্যান্ডস)। বাকী দলটি তখন জার্মানির মেজরিটি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি হিসাবে পরিচিত ছিল। বিপুল সংখ্যক হতাহত হওয়া, জনবল সরবরাহ কমে যাওয়া, সম্মুখভাগে ক্রমবর্ধমান অসুবিধাগুলি প্রকট হওয়া এবং হতাহতের অগনিত প্রবাহের সাথে যুদ্ধের উৎসাহ হ্রাস পাওয়ায় এমটা ঘটেছিল। সাধারণ জনগণের মধ্যেও এর ভয়াবহ প্রভাব মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। একমাত্র উল্লেখযোগ্য খবর ছিল ইয়েপ্রেসের যুদ্ধে প্রথম বারের মত সরিষা গ্যাসের ব্যবহার।

এর পরে, সার্বিয়া, গ্রীস, ইতালি এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের মাধ্যমে মনোবল ফিরে পেতে সাহায্য করে যা কেন্দ্রীয় শক্তিগুলির পক্ষে দুর্দান্ত ভাবে কাজ করে। ১৯১৪ সাল থেকে ১৯১৭ সালের শেষ এবং ১৯১৮ এর শুরুর দিক পর্যন্ত মনোবল সর্বকালের শীর্ষে ছিল তার সাথে যোগ হয় বিপ্লব উত্থানের পরে রাশিয়ার পরাজয় এবং জার্মান জনগণ লুডেনডর্ফের পশ্চিমে "শান্তির অবমাননা" বলে যা বলেছিল তার অনুধাবন হয়। [৭][৮]

১৯১৮

১৯১৮ সালের বসন্তের দিকে জার্মানরা বুঝতে পারে সময় ঘনিয়ে আসছে। তারা নতুন সেনাবাহিনী এবং নতুন কলা কৌশল নিয়ে পরিকল্পিত ধর্মঘটের জন্য প্রস্তুত ছিল। সেই সাথে আশা করছিল যে লক্ষ লক্ষ আমেরিকান ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সৈন্য যুদ্ধে অংশ নেয়ার আগেই তারা পশ্চিম সম্মুখের যুদ্ধে জিতে যাবে। জেনারেল এরিক লুডেন্ডরফ এবং ফিল্ড মার্শাল পল ফন হিনডেনবার্গের হাতে পুরো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিল। তারা পূর্ব ভাগের সম্মুখ থেকে বড় আকারের অতিরিক্ত সৈন্য সামন্ত সরিয়ে আনে। সেই সাথে তারা তড়িৎ গতিতে সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে শত্রু পক্ষের যোগাযোগ কেন্দ্র গুলোতে আক্রমণ করে। নতুন কৌশলগুলি সত্যিকার অর্থেরি পশ্চিম সম্মুখে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতো, তবে জার্মান সেনাবাহিনী কিছুটা অতিমাত্রায় আশাবাদী ছিল।

১৯১৭-১৮ সালের শীতে পশ্চিম সম্মুখ একদমই "স্থবির" হয়ে যায়- ব্রিটিশ হতাহতের সংখ্যা প্রতি সাপ্তাহে গড়ে মাত্র ৩,০০০ এ নেমে আসে। আঠালো কাদা মাটির জন্য বড় ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করা ছিল প্রায় অসম্ভব। নীরবে জার্মানরা পূর্ব দিক থেকে তাদের সেরা সেরা সৈন্য বাছাই করে নিয়ে আসে। বাছাই কৃত সৈন্যদের দিয়ে গঠিত হয় বিশেষ সৈন্য দল এবং পুরো শীতের মৌসুমে তাদের নতুন কৌশল শেখানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। একদমই ঘড়ি ধরা সময়ে জার্মান আর্টিলারি দল হঠাৎ করে ভয়ংকর একটি বাঁধ তৈরি করবে এগিয়ে যাওয়া সৈন্যদলের সামনে। ছোট দলে বিভক্ত হওয়া, হালকা মেশিনগান চালানো, বিশেষ সৈন্যদল শত্রু পক্ষের শক্ত আক্রমণ এডিয়ে যেতে সাহায্য করবে এবং সরাসরি মূল সেতু, কমান্ড পোস্ট, সরবরাহ রশদ এবং সর্বোপরি আর্টিলারি ব্যাটারির দিকে আগাতে থাকবে। শত্রু পক্ষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রথম আধা ঘন্টার মধ্যেই পরিস্থিতি ঘোলাটে করে আঘাত হানবে। আর্টিলারি গুলোকে দখল করে তারা শত্রুপক্ষের আগ্নেয়াস্ত্র গুলো ধ্বংস করতে চাবে। বাঁধা ধরা সময়ের মধ্যে আরো দুটি সেনা দল পাঠানো হবে যাদের কাজ হবে শক্ত জায়গা গুলোতে শত্রু পক্ষকে আরো কোণঠাসা করে ফেলা। ধাক্কা খাওয়া সৈন্যরা ভয়ে এবং বিভ্রান্ত হয়ে প্রতিরক্ষার প্রথম সারি থেকে ভয়ে পালিয়ে যাবে। এমনই একটি ঘটনায় বশত্রু পক্ষ সাইকেলে চেপে ধেয়ে আসলে মিত্র পক্ষ রেজিমেন্ট ভেঙ্গে পালিয়ে যায়। আতঙ্কিত লোকজন সাইকেল গুলো আটক করে এবং দ্রুতই পিছু হটে যায়। বিশেষ সৈন্যদল গতিশীল ভাবে আগাতে পারলেও তাদের আগ্নেয়াস্ত্র যথেষ্ট ছিল না। অবশেষে ১৯৩৯ এবং ১৯৪০ সালের দিকে বোমারু এবং ট্যাংকারের সাহায্য নিয়ে এই পদ্ধতিতে আক্রমণ সফল হলেও ১৯১৮ সালে জার্মানরা এ দুটি দিক থেকেই পিছিয়ে ছিল। [৯]

কিয়েভ এ জার্মান সেনাদল, মার্চ ১৯১৮

১৯১৮ সালে লুডেনডর্ফ ফরাসি আক্রমণের পরিবর্তে প্রথমেই ব্রিটিশ আক্রমণ করে বিপদে পড়ে যায়। ভুলবসত তিনি ভেবেছিলেন যে নতুন কৌশলে ব্রিটিশদের আক্রমণ করে দ্রুতই নিরাশ হবেন। ক্লান্তি, হতাশায় ফরাসি হয়তো গুটিয়ে যেত। জার্মানদের আক্রমণে ব্রিটিশরা আরো হিংস্র হয়ে উঠে- এটিই ছিল যুদ্ধের বড় অংশ। মার্চ মাসে সোমমে নদীতে কুয়াশার ফলে ৬৩টি বিভাগ অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। যত যাই হোক না কেন, জার্মান লেফটেন্যান্টরা তাদের মানচিত্র এবং আদেশ মুখস্থ করেই মাঠে নেমেছিল। ব্রিটিশরা ২,৭০,০০০ মানুষ হারায় এবং ৪০ মাইল পিছিয়ে যায় তার পর থেকে তারা ধরে রাখে। তারা দ্রুতই জার্মানদের সামলানোর কৌশল রপ্ত করে নেয়, তার পিছিয়ে যায়, খাঁদ গুলো থেকেও সরে যায়, আক্রমণ কারীদের ছড়িয়ে পড়তে দেয় এবং তার পর তারা পালটা আক্রমণ করে। তারা তাদের আর্টিলারি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র এবং মোবাইল পিলবক্স হিসাবে ব্যবহৃত ট্যাংক থেকে সুবিধা লাভ করে যা যে কোন সময় পিছু হটতে পারে এবং পাল্টা আক্রমণ করতে পারে। এপ্রিলের দিকে লুডেন্ড্রফ আবারী ব্রিটিশদের আক্রমণ করে, ৩,০৫,০০০ সেনা আহত হয় কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে রশদ তার ছিল না। লুডেন্ড্রফ মার্চ এবং এপ্রিলের মধ্যে আরো পাঁচটি আক্রমণের পরিকল্পনা করে এবং প্রায় দশ লক্ষের মত ব্রিটিশ এবং ফরাসি সৈন্য হতাহত হয়। পশ্চিম সম্মুখ তখন পুরোটাই খুলে গিয়েছিল- খাঁদ গুলোও সেখানে ছিল কিন্তু চলাফেরার গুরুত্বের কারণে এগুলো আবার চালু করা হয়। মিত্র বাহিনীকেও আটক করা হয়। জার্মানরা তাদের আঘাতের দ্বিগুণ ক্ষতির সম্মুখীন হয় যার মধ্যে বেশীরভাগই ছিল তাদের বিশেষ সৈন্যদল। নতুন জার্মান গঠিত হয় কম বয়স্ক লোকজন দিয়ে অথবা মধ্যবয়স্ক গরীব পরিবারের লোকজন নিয়ে। তারা ১৯১৪ সালের ফলাফল নিয়ে অনুপ্রাণিত হতে পারেনি, যুদ্ধ নিয়ে গর্বিতও হতে পারেনি- তারা এটাকে ঘৃণার চোখে দেখে এবং কেউ কেউ বিপ্লবের কথাও তুলে। লুডেনডর্ফ তার ক্ষতি পোষাতে পারেনি এবং মাথা খাটিয়েও নতুন কোন ফন্দি ফিকির বের করতে পারেনি যা দিয়ে পরাজয়ের কবল থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারতো। ব্রিটিশরাও একইভাবে সমগ্র সাম্রাজ্য থেকে শক্তি সঞ্চয় করেছিল। কিন্তু যেহেতু তাদের সম্মুখ ভাগ ভাল অবস্থানে ছিল এবং তারা অনিবার্য বিজয় দেখতে পাচ্ছিল, যার ফলে তাদের মনোবল শক্ত অবস্থানেই ছিল। মহান জার্মানির বসন্ত আক্রমণ সময়ের বিরুদ্ধে একটি প্রতিযোগিতা ছিল, কারণ সবাই দেখতে পারে যে আমেরিকানরা লক্ষ লক্ষ তাজা তরুণদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যারা অবশেষে পশ্চিম ফ্রন্টে আসবেই। [১০][১১]

তথ্যসূত্র

  1. Jeffrey Verhey, The Spirit of 1914: Militarism, Myth and Mobilization in Germany (Cambridge U.P., 2000).
  2. N.P. Howard, "The Social and Political Consequences of the Allied Food Blockade of Germany, 1918-19," German History (1993), 11#2, pp. 161-88 online p. 166, with 271,000 excess deaths in 1918 and 71,000 in 1919.
  3. Hew Strachan (১৯৯৮)। World War 1বিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 125আইএসবিএন 9780198206149 
  4. Jeff Lipkes, Rehearsals: The German Army in Belgium, August 1914 (2007)
  5. Barbara Tuchman, The Guns of August (1962)
  6. Fred R. Van Hartesveldt, The Battles of the Somme, 1916: Historiography and Annotated Bibliography (1996), pp. 26-27.
  7. C.R.M.F. Cruttwell, A History of the Great War: 1914-1918 (1935) ch 15-29
  8. Holger H. Herwig, The First World War: Germany and Austria-Hungary 1914-1918 (1997) ch. 4-6.
  9. Bruce I. Gudmundsson, Stormtroop Tactics: Innovation in the German Army, 1914-1918 (1989), pp. 155-70.
  10. David Stevenson, With Our Backs to the Wall: Victory and Defeat in 1918 (2011), pp. 30-111.
  11. C.R.M.F. Cruttwell, A History of the Great War: 1914-1918 (1935), pp. 505-35r.