নাশিদ
নাশিদ (আরবি: একবচন نشيد nashīd, বহুবচন أناشيد anāshīd, বঙ্গানুবাদে: "গান") সঙ্গীত এর একটি ধারা। ইসলামের একটি নির্দিষ্ট শৈলী বা ঐতিহ্য অনুসারে গানগুলো গাওয়া হয় খালি গলায় অথবা যন্ত্রের সাথে। নাশিদ সমগ্র ইসলামী বিশ্ব জুড়ে জনপ্রিয়। একটি নাশিদের উপাদানে বা গানে সাধারণত ইসলামী বিশ্বাস, ইতিহাস এবং ধর্মের পাশাপাশি বর্তমান ঘটনাগুলি উল্লেখ করা হয়।[১]
পণ্ডিতদের বাদ্যযন্ত্র সম্পর্কিত মতামত
[সম্পাদনা]কিছু উলামা যুক্তি দেখান যে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার হাদিসে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। প্রধান চারটি মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা - ইসলামী অনেক বিশিষ্ট পণ্ডিত বাদ্যযন্ত্রের বৈধতা এবং ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক করেছেন।[২][৩]
সুন্নি পন্ডিতদের হাদিস সহীহ আল-বুখারি সহীহ অনুসারে, মুহাম্মদ শিখিয়েছেন যে বাদ্যযন্ত্র পাপ:
আবু আমির বা আবু মালিক আল-আশআরী (মুহাম্মদের একজন সাহাবী) বলেছেন যে তিনি মুহাম্মদকে বলতে শুনেছেন: "আমার অনুসারীদের মধ্যে এমন কিছু লোক থাকবে যারা অবৈধ যৌন মিলন, রেশম পরিধান করা, মদ্যপান করা সাহাবা বৈধ মনে করবে। পানীয় এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারও বৈধ মনে করবে আর কিছু লোক থাকবে যারা পাহাড়ের ধারে অবস্থান করবে এবং সন্ধ্যায় তাদের রাখাল তাদের ভেড়া নিয়ে তাদের কাছে আসবে এবং তাদের কাছে কিছু চাইবে। কিন্তু তারা তাকে বলবে আগামীকাল আসতে।আল্লাহ রাত্রিকালে তাদের ধ্বংস করবেন এবং তাদের উপর পাহাড়টি ধসাবেন, বাকিদেরকে বানর ও শুকরে পরিণত করবেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তারা এভাবেই থাকবে।"[৪]
যাইহোক, একই বইতে সঙ্গীত অনুমোদিত হওয়ার প্রমাণও রয়েছে। আয়েশা বললেন:
আবু বকর আমার বাড়িতে এলেন যখন আমার পাশে দুটি আনসারী মেয়ে বুআত দিবসের বিষয়ে আনসারদের গীত গাইছিল তবে তারা গায়িকা ছিলেননা।আবু বকর প্রতিবাদ করে বললেন, “আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।! "এটা ঈদের দিন ঘটেছিল এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবু বকর!প্রত্যেক জাতির জন্য একটি 'পরিচিতির বৈশিষ্ট্য' আছে এবং আমাদের হচ্ছে 'ইদ'।[৫]
ইমাম আল-গাজালী এবং ইবনে সিনার মতো অসংখ্য ঐতিহাসিক ইসলামিক পণ্ডিতও বলেছেন যে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে যতক্ষণ না গানগুলি হারামের প্রচার না করে।[৬]
আধুনিক ব্যাখ্যা
[সম্পাদনা]নাশিদ শিল্পীদের একটি নতুন প্রজন্ম তাদের শিল্পে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে।অনেক নতুন নাশিদ শিল্পী অনারব এবং বিভিন্ন ভাষায় গান করেন। কিছু নাশিদ ব্যান্ড হল নেটিভ দ্বীন, আউটল্যান্ডিশ এবং রায়হান ।অন্যান্য সুপরিচিত শিল্পীরা হলেন আহমেদ বুখাতির, ইউসুফ ইসলাম (পূর্বে ক্যাট স্টিভেনস নামে পরিচিত), সামি ইউসুফ, জুনায়েদ জামশেদ, মাহের জেইন, হ্যারিস জে, সিদ্দ, হুমুদ আল খুদের, হামজা নামিরা, আতিফ আসলাম, রয়েফ, মেসুত কুরটিস, ডাউবিউড এবং জয়ন ভিখা প্রমূখ।[৭]
ভারতীয় উপমহাদেশে কাওয়ালি পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা উর্দুতে আধ্যাত্মিকতার সাথে ইসলামের সম্পর্কের জন্য বিখ্যাত।বলা হয়ে থাকে যে ভুলে শাহ, কবির সিং, বাবা ফরিদ এবং অন্যান্যদের মত অনেক আধ্যাত্মিক পুরুষ পাঞ্জাবি, সারাইকি এবং উর্দুতে ইসলামের বার্তা ছড়িয়েছিলেন।[৮]
কাওয়ালির সর্বোচ্চ গুরুকে বলা হয় ওস্তাদ।যেমন: নুসরাত ফতেহ আলী খান এবং রাহাত ফতেহ আলী খান।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] [ উদ্ধৃতি প্রয়োজন ]
নাশিদ শিল্পীরা বিশ্বব্যাপী মুসলিম দর্শকদের কাছে গীত পরিবেশন করে এবং উত্তর আমেরিকার ইসলামিক সোসাইটি সহ ইসলামিক উৎসব (যেমন মওলিদ), সম্মেলন, কনসার্ট এবং শোতে পারফর্ম করতে পারে। বিভিন্ন শিল্পী ও সংগঠন (যেমন: নাশিদ বে ) একটি যন্ত্র-মুক্ত নাশিদ প্রচার করে যেখানে নাশিদে যন্ত্রের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের প্রবণতা বর্তমান।[৯]
ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএস) তাদের ভিডিও এবং প্রচারে নাশিদের ব্যবহারের জন্য পরিচিত। উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল দাওলাত আল-ইসলাম কামাত ("ইসলামিক স্টেট স্ট্যান্ড আপ") শ্লোগান যা আইএসআইএল-এর একটি অনানুষ্ঠানিক সঙ্গীত হিসাবে রাখা হয়েছিল। এছাড়াও সলিল আল-সাওয়ারিম ("ক্ল্যাশিং অফ সোর্ডস") নামের একটি নাশিদও তারা ব্যবহার করেছিল। আইএসআইএস ফরাসি ভাষায়ও নাশিদ তৈরি করেছে। ২০১৬ সালের নাশিদ Ma vengeance ("আমার প্রতিশোধ") জানুয়ারী ২০১৫ ইলে-ডি-ফ্রান্স আক্রমণে,[১০] নভেম্বর ২০১৫ প্যারিস আক্রমণে এবং ২০১৬ সালে ব্রাসেলস বোমা হামলার সাথে সম্পর্ক রয়েছে৷ ২০১৬ সালের নাশিদ Par Amour ("ভালবাসার জন্য") যোদ্ধাদের শাহাদাতকে মহিমান্বিত করে। [১১]
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- থিবন, জিন-জ্যাকস, ইনশাদ, মুহাম্মাদ ইন হিস্ট্রি, থট অ্যান্ড কালচার: অ্যান এনসাইক্লোপিডিয়া অফ দ্য প্রফেট অফ গড (২ খণ্ড) সি. ফিটজপ্যাট্রিক এবং এ. ওয়াকার দ্বারা সম্পাদিত, Santa Barbara, ABC-CLIO, ২০১৪, ১মখন্ডের পৃ. ২৯৪-২৯৮।আইএসবিএন ১৬১০৬৯১৭৭৬
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Raudvere, Catharina; Stenberg, Leif (১৫ জানুয়ারি ২০০৯)। Sufism Today: Heritage and Tradition in the Global Community। I. B. Tauris। পৃষ্ঠা 76। আইএসবিএন 9781845117627। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৪।
- ↑ Raudvere, Catharina; Stenberg, Leif (১৫ জানুয়ারি ২০০৯)। Sufism Today: Heritage and Tradition in the Global Community। I. B. Tauris। পৃষ্ঠা 76। আইএসবিএন 9781845117627। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "Why Music Is Not Haram – Center for Sufism and Islamic Studies"। www.shahbazcenter.org।
- ↑ Shahih al-Bukhari Volume 7, Book 69, Number 494v: English translation of this hadith at https://sunnah.com/bukhari/74/16.
- ↑ Sahih al-Bukhari 952 (Book 13, Hadith 4); English translation at https://sunnah.com/bukhari:952.
- ↑ "What is the ruling concerning Music?"। Dar al-Ifta al-Misriyyah। Archived from the original on ২০২১-০৮-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৬-২৯।
- ↑ Marshall, Alex (৯ নভেম্বর ২০১৪)। "How Isis got its anthem"। The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0261-3077। ২৯ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০।
- ↑ Schatz, Bryan। "Inside the world of jihadi propaganda music"। Mother Jones (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০৮।
- ↑ Heilpern, Will (৩১ মার্চ ২০১৬)। "Pro-Trump, Clinton, Sanders campaign ads spotted next to ISIS videos on YouTube"। Business Insider। Insider Inc.। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৯।
- ↑ "Le nouveau chant en français de l'EI « Ma vengeance » justifie le terrorisme en Europe et fait l'éloge des attentats de Paris et de Bruxelles"। Memri (ফরাসি ভাষায়)। ৭ জুলাই ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "Un nouveau chant de l'EI en français glorifie le martyre"। Memri (ফরাসি ভাষায়)। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৯।