(Translated by https://www.hiragana.jp/)
পতাকাবিদ্যা - উইকিপিডিয়া বিষয়বস্তুতে চলুন

পতাকাবিদ্যা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
A blue flag depicting a knot tied in yellow.
পতাকাবিদ্যা সংগঠনসমূহের আন্তর্জাতিক সংঘের পতাকা

পতাকাবিদ্যা (ইংরেজি: vexillology) বলতে পতাকার ইতিহাস, প্রতীকী অর্থ ও ব্যবহার অধ্যয়নকারী বিদ্যাকে বোঝায়।[]

যে ব্যক্তি পতাকা বিষয়ে অধ্যয়ন করেন, তাকে পতাকাবিদ (vexillologist) বলে।

পতাকা নকশা করার শিল্পকলাকে পতাকা অঙ্কনকলা (vexillography) বলে, আর যে শিল্পী পতাকা নকাশা করেন, তাকে পতাকা অঙ্কন করেন, তাকে পতাকা অঙ্কনশিল্পী (vexillographer) বলে। পতাকা নিয়ে শৌখিন কাজকর্ম করা ব্যক্তিকে পতাকাপ্রেমী (vexillophile) বলে।

ব্যুৎপত্তি

[সম্পাদনা]

ইংরেজি

[সম্পাদনা]

পতাকাবিদ্যার ইংরেজি পরিভাষা ভেক্সিলোলজি কথাটি লাতিন শব্দ ভেক্সিলুম (vexillum) (রোমান অশ্বারোহী সেনাদের দ্বারা বহনকৃত এক ধরনের বর্গাকার পতাকা)[] ও গ্রিক প্রত্যয় "লোগিয়া" (যার অর্থ বিদ্যা) যুক্ত করে সৃষ্টি হয়েছে।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

মার্কিন পণ্ডিত হুইটনি স্মিথ ১৯৫৭ সালে ইংরেজিতে পতাকাবিদ্যার পরিভাষা হিসেবে "ভেক্সিলোলজি" প্রথম ব্যবহার করেন। তিনি লেখেন যে যদিও মানব সভ্যতার আদিলগ্ন থেকেই পতাকার ব্যবহার প্রচলিত, তা সত্ত্বেও পতাকার ব্যবহারের বিষয়ে নিবেদিত গবেষণার ইতিহাস এতই সাম্প্রতিক যে ১৯৫৯ সালের আগে ভেক্সিলোলজি (পতাকাবিদ্যা) পরিভাষাটি কখনও কোনও লেখায় প্রকাশ পায়নি।"[][] এর আগে পতাকা বিষয়ক অধ্যয়ন-গবেষণাকে সাধারণত কুলতত্ত্ব নামক বিদ্যার একটি অংশ হিসেবে গণ্য করা হত, যে বিদ্যায় পশ্চিমা অভিজাতদের পরিধেয় কুলচিহ্নের গবেষণা করা হয়।[]

হুইটনি স্মিথ ১৯৬১ সালে দ্য ফ্ল্যাগ বুলেটিন নামক গ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে পতাকাবিদ্যা শাস্ত্রটিকে আনুষ্ঠানিকতা প্রদান করেন।[] তিনি সারা জীবন ধরে বিভিন্ন পতাকা সংস্থা গঠন করেন ও সভার আয়োজন করেন, যার মধ্যে প্রথম আন্তর্জাতিক পতাকাবিদ্যা সভা উল্লেখ্য। এছাড়া তিনি উত্তর আমেরিকান পতাকাবিদ্যা সংস্থাপতাকাবিদ্যা সংস্থাসমূহের আন্তর্জাতিক সংঘ গঠন করেন।[]

পতাকাবিদ্যায় সংশ্লিষ্টরা সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস ও নকশা নিয়ে উচ্চশিক্ষায়তনিক গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেন। এছাড়া এতে পতাকা নির্মাণ শিল্পখাত ও পতাকা বিষয়ে গভীর আগ্রহী ব্যক্তিরাও অবদান রাখেন। পতাকাবিদ্যা সংস্থাসমূহের আন্তর্জাতিক সংঘ ও স্থানীয় পতাকাবিদ্যা সভাগুলিতে পতাকা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ১৯৬৯ সাল থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর আন্তর্জাতিক সংঘটির পৃষ্ঠপোষকতায় আন্তর্জাতিক পতাকাবিদ্যা মহাসভার আয়োজন করা হয়ে আসছে। সেই মহাসভায় উপস্থাপিত গবেষণাপত্রগুলি পরবর্তীতে ঐ মহাসভার কার্যবিবরণীতে প্রকাশ করা হয়।[]

পতাকাবিদ্যা সংস্থাসমূহ

[সম্পাদনা]

পতাকাবিদ্যা সংস্থাসমূহের আন্তর্জাতিক সংঘ (International Federation of Vexillological Associations, সংক্ষেপে FIAV) পতাকাবিদ্যার আন্তর্জাতিক ছত্র-সংস্থা। এর অন্তর্ভুক্ত উল্লেখযোগ্য সংস্থাগুলির মধ্যে আছে উত্তর আমেরিকান পতাকাবিদ্যা সংস্থা (North American Vexillological Association), জার্মান পতাকাবিদ্যা সংস্থা (জার্মান: Deutsche Gesellschaft für Flaggenkunde) এবং ফ্ল্যাগস অভ দ্য ওয়ার্ল্ড (Flags of the World, FOTW) নামক আন্তর্জালিক ক্ষেত্র (ওয়েবসাইট)।[]

পতাকা নকশাকরণ

[সম্পাদনা]

পতাকাবিদ্যায় পতাকা নকশাকরণের বহু জটিল ও বহুমুখী এলাকা নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়।

একটি গবেষণার এলাকা হল কোনও পতাকা কী কারণে প্রতিনিধিত্বকৃত অঞ্চলের একটি ভাল প্রতীকের কাজ করে। টেড কে পতাকাবিদ্যার পাঁচটি মৌলিক নিয়মের রূপরেখা অঙ্কন করেছেন, যা ভালো ও খারাপ পতাকা নকশাকরণের সাথে সম্পর্কিত।[১০] এই নিয়মগুলি তাঁর গুড ফ্ল্যাগ, ব্যাড ফ্ল্যাগ শীর্ষক গ্রন্থে বিধৃত হয়েছে। উত্তর আমেরিকান পতাকাবিদ্যা সংস্থার মতে বইটিকে "পতাকাবিদ্যায় আগ্রহী বা পতাকা নকশা করতে ইচ্ছুক যে কোনও ব্যক্তির জন্য একটি ত্বরিত আকরগ্রন্থ" হিসেবে লেখা হয়।[১০] টেড কে-র নিয়মগুলি নিম্নরূপ:

  1. পতাকার নকশা সহজ সরল রাখুন: পতাকার নকশা এত সহজ সরল হবে যে শিশুরাও অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছন্দে একটি ভালো পতাকা আঁকতে পারবে।[১০] যেমন ফ্রান্সের পতাকা এই নিয়মটি অনুসরণ করেছে, কিন্তু ব্রাজিলের পতাকা করেনি।
  2. অর্থবহ প্রতীক ব্যবহার করুন: একটি ভালো পতাকার রঙ, নকশা ও উপাদানগুলিকে প্রতিনিধিত্বকৃত অঞ্চলের কোনও দিক তুলে ধরতে হবে।[১০] যেমন কানাডার পতাকাটিকে দেশটির ইতিহাসব্যাপী গর্ব ও শক্তির প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।[১১]
  3. দুই বা তিনটি মৌলিক রং ব্যবহার করুন: যেসব পতাকাতে অত্যধিক রং ব্যবহার করা হয়, সেগুলি বিশৃঙ্খল হবার ঝুঁকি থাকে, তাই আদর্শ রঙের সংকলন (যেমন লাল, সবুজ, সাদা, ইত্যাদি) থেকে দুই বা তিনটি রং নিয়ে যেগুলি একে অপরের সাথে ভাল মিলে, সেগুলি ব্যবহার করাই শ্রেয়।[১০] কিছু কিছু ক্ষেত্রে পতাকাতে অনেকগুলি রং ব্যবহৃত হলেও সেটি ভালো হতে পারে, যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার পতাকা
  4. বর্ণসমষ্টি ও সীলমোহর পরিহার করুন: সীলমোহর ও বর্ণসমষ্টির ব্যবহার পতাকার সরলতা ও স্বাতন্ত্র‍্যের ক্ষতি করে। তাই এগুলি পরিহার করা উচিত।[১০]
  5. স্বাতন্ত্র্যসূচক হোন বা সম্পর্কিত হোন: একটি পতাকা হল সর্বাগ্রে কোনও অঞ্চল শনাক্তকারী চিহ্ন, তাই এটিকে স্বতন্ত্র ও সহজে শনাক্তযোগ্য হতে হয়। তবে অন্যান্য পতাকাসমূহের অনুরূপ নকশা উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে (যেমন নর্ডীয় ক্রুশ) একাধিক দেশের মধ্যে এক ধরনের ঐক্যভাব জ্ঞাপন করা যেতে পারে।[১০]

উপরের নিয়মগুলি কিছু সুপারিশমাত্র, এগুলি পতাকা নকশাকরণের কোনও আইন নয়। এই নিয়মগুলির অনেক ব্যতিক্রম বিদ্যমান।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Smith, Whitney. Flags Through the Ages and Across the World New York: McGraw-Hill, 1975. Print.
  2. "Vexillum"Merriam-Webster Online Dictionary। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  3. "Vexillology"Dictionary.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-২২ 
  4. "Vexillology"। CRW Flags। ২০১৬-১০-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-০৩ 
  5. "Vexillology"Merriam-Webster Online Dictionary। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  6. Fox-Davies, Arthur Charles (১৯০৯)। A Complete Guide to Heraldry। London, Edinburgh: T.C. & E.C. Jack। পৃষ্ঠা 1। আইএসবিএন 9781602390010ওসিএলসি 913797670 
  7. "Consider Vexillology"semioticon.com – SemiotiX। ২০১৮-০৪-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-০১ 
  8. Vulliamy, Elsa (ডিসেম্বর ১৫, ২০১৫)। "Which flag is it? Take our quiz to find out"The Independent। ২০২২-০৮-১৭ তারিখে মূলঅর্থের বিনিময়ে সদস্যতা প্রয়োজন থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৩, ২০১৬ 
  9. "Current Members"International Federation of Vexillological Associations। ২০২২-১০-১৬। ২০২১-০৪-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-১৭ 
  10. "Good Flag, Bad Flag - North American Vexillological Association"nava.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-০৫ 
  11. Heritage, Canadian (২০১৭-০৯-১১)। "National flag of Canada"www.canada.ca। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-০৫ 

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]