বেসামরিক প্রতিরক্ষা
বেসামরিক প্রতিরক্ষা বলতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ (যেমন যুদ্ধ) বা অন্য কোনও জরুরি অবস্থাকালীন সময়ে কোনও রাষ্ট্রের বেসামরিক নাগরিকদের জানমালের প্রতিরক্ষা বা সুরক্ষা দানকারী বিভিন্ন ধরনের জরুরি সেবামূলক কর্মকাণ্ডকে বোঝায়, যা সাধারণত বেসামরিক নাগরিকদের একটি সুসংগঠিত স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী প্রদান করে থাকে। একে ইংরেজিতে "সিভিল ডিফেন্স" বা "সিভিল প্রোটেকশন" নামে ডাকা হয়।
বেসামরিক প্রতিরক্ষায় জরুরি অবস্থাকালীন কর্মকাণ্ডের মূলনীতিগুলি ব্যবহার করা হয় : বিপদ প্রতিরোধ, নিরসন, প্রস্তুতি, প্রত্যুত্তর, জরুরি অবস্থাকালীন স্থানান্তরণ এবং পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তন। এই ধরনের কর্মসূচিগুলি সম্ভবত ১৯২০-এর দশকের বা তারও আগে আলোচিত হয়েছিল। ১৯৩০-এর দশকে যুদ্ধ ও যুদ্ধবিমান থেকে গোলাবর্ষণের হুমকি বৃদ্ধি পেলে কিছু কিছু দেশে এগুলি বাস্তবায়ন করা শুরু হয়। পরবর্তীতে পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি বাস্তবে রূপ পেলে বেসামরিক প্রতিরক্ষার ধারণাটি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পরে বেসামরিক প্রতিরক্ষার লক্ষ্য বদলে যায়। সামরিক আক্রমণের পরিবর্তে জরুরি অবস্থা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা মুখ্য হয়ে ওঠে। এই নতুন ধারণাটিকে বেশ কয়েকটি পরিভাষার সাহায্যে বর্ণনা করা হয় যেগুলি প্রতিটির নিজস্ব অর্থ বৈচিত্র্য রয়েছে। যেমন সংকট ব্যবস্থাপনা, জরুরি অবস্থা ব্যবস্থাপনা, জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুতি, সম্ভাব্য বিপদ পরিকল্পনা, নাগরিক কন্টিনজেন্সি, নাগরিক সাহায্য ও নাগরিক সুরক্ষা।
কিছু কিছু দেশে বেসামরিক প্রতিরক্ষাকে দেশের সামগ্রিক প্রতিরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হয়। যেমন সুইডেনে সম্পূর্ণ প্রতিরক্ষা পরিভাষাটি দিয়ে বহু বিভিন্ন ধরনের জাতীয় সম্পদকে প্রতিরক্ষার কাজে নিবেদিত করাকে বোঝায় যার মধ্যে বেসামরিক জীবনের সমস্ত দিক অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিছু কিছু দেশে নাগরিক বেসামরিক প্রতিরক্ষাকে আধা সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে কিংবা এটিকে সেনাবাহিনীর সশস্ত্রবাহিনী সমূহের মধ্যে অঙ্গীভূত করে নেওয়া হয়েছে; যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নের বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী।