জুলকারনাইন
জুলকারনাইন (বিকল্প উচ্চারণ: যালকারনাইন) কুরআনে উল্লিখিত একজন ব্যক্তি। কুরআনের সূরা কাহাফ্-এ জুলকারনাইন নামটি উল্লিখিত আছে। কুরআনের ব্যাখ্যাকারীদের কারো কারো মতে তিনি একজন নবী ছিলেন। অন্যপক্ষে, প্রাচীনকালে আরব উপদ্বীপে জুলকারনাইন নামটি পরিচিত ছিল অল্প বয়সী উচ্চ ক্ষমতাধর একজন শাসক হিসেবে। জুলকারনইন শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল "দুই শিং বিশিষ্ট"। জুলকারনাইন কে তা নিয়ে কিছু তত্ত্ব আছে যার মধ্যে সর্বাধিক প্রচারিত হলো মেসেডোনিয়ার সম্রাট আলেকজাণ্ডারকেই (৩য়) কুরআনে জুলকারনাইন হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।[১]
বিস্তারিত পরিচয়
[সম্পাদনা]কোরআন মাজিদে জুলকারনাইন এর পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি এবং কোন হাদিসেও জুলকার নাইন এর বিস্তারিত পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি ।
কুরআনে জুলকারনাইন সম্পর্কিত বর্ণনা
[সম্পাদনা]কুরআন মাজীদের সূরা কাহাফের আয়াত নম্বর ৮৩-৯৯ অংশে জুলকারনাইন সম্পর্কিত বর্ণনা আছে। নবী হিসেবে জুলকারনাইনের নাম উল্লেখ নেই যদিও কিন্তু তিনি নবী ছিলেন না এমনটিও বলা হয়নি। বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাকে সকল বিষয়ে পথনির্দেশ বা দিকনির্দেশ এবং/অথবা কার্যোপকরণ দিয়েছেন। তিনি এরপর দুটি পথ অনুসরণ করেন। এর মধ্যে এক পথে গিয়ে তিনি ইয়াজুজ-মাজুজের হাতে অত্যাচারিত এক জাতির দেখা পান। তিনি তাদের জন্য গলিত তামার তৈরি একটি প্রাচীর বানিয়ে দেন। সূরা কাহাফ ৮৩-৮৬ নম্বর আয়াতে নিম্নরূপ বর্ণিত আছেঃ
"তারা আপনাকে জুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব।
আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম। অতঃপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন।অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে জুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।"[২]
জুলকারনইন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতেন নির্যাতীত, বঞ্চিত, শাসকের হাতে শোষিত লোকদের মুক্তি দিতেন। কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী অরুণাচলে, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারনইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে। সূরা কাহাফের ৯৩ হতে ৯৮ নম্বর আয়াতে জুলকারনাইনের এই প্রাচীর নির্মাণের উল্লেখ আছে। [২] ধারণা করা হয় এই জাতি ধাতুর ব্যবহার জানতো। তারা হাপর বা ফুঁক নল দ্বারা বায়ু প্রবাহ চালনা করে ধাতুকে উত্তপ্ত করে গলাতে পারতো এবং তারা লোহার পিন্ড ও গলিত তামাও তৈরি করতে পারতো। জুলকারনাইন তাদের প্রতিরোধ প্রাচীর তৈরি করার জন্য উপাদান ও শ্রম সরবরাহ করতে বললেন। তারা নিজেরাই জুলকারনাইনের আদেশ মত দুই পর্বতের মাঝে শক্ত লোহার প্রাচীর বা দ্বার তৈরি করলো।[৩]
বাইবেলে উল্লেখ
[সম্পাদনা]ইয়াজুজ মাজুজ জাতি কে বাইবেলে গগ ম্যাগগ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
জুলকারনাইন এবং আলেকজান্ডার বিতর্ক
[সম্পাদনা]আধুনিক যুগের গবেষক ও পন্ডিতদের মতে কুরআনে উল্লিখিত জুলকারনাইনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক সম্ভাব্য ৩ টি চরিত্র নির্দেশ করা হতে পারে , যারা হলেন ;
- আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট
- সাইরাস দ্য গ্রেট
- হিমায়ার সাম্রাজ্যের একজন শাসক। [৪]
জুলকারনাইনের প্রাচীর
[সম্পাদনা]এই প্রাচীরটির সঠিক অবস্থান জানা যায়নি। এ সম্পর্কে নানা মতবাদ প্রচলিত। একটি মতবাদ অনুসারে, কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী অরুণাচলে, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারনাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে। এই বর্ণনার সাথে মিলে যায় এমন একটি দেয়াল রয়েছে কাসপিয়ান সাগর উপকূলে। ইতিহাসবিদদের দ্বারা স্বীকৃত যে এ দেয়াল তৈরি করেছিলেন আলেকজান্ডার। যা তৈরি করতে লোহা ও তামা ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে একটি তোরণ রয়েছে যেটি ‘কাসপিয়ান গেট’ বা আলেকজান্ডারের গেট নামে পরিচিত। দারিয়াল এবং দারবেন্ত নামে দুটি শহরে এর ব্যপ্তি। দারিয়াল রাশিয়া এবং জর্জিয়ার সীমান্তে অবস্থিত। এটিকে বলা হয় কাজবেক পাহাড়ের পূর্ব প্রান্ত। দারবেন্ত রাশিয়ার দক্ষিণে অবস্থিত একটি শহর। কাসপিয়ান সাগরের দক্ষিণপূর্ব উপকূলে নির্মীত এ দেয়ালটি তোলা হয়েছে দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে। এ পাহাড় দুটিকে বলা হয় পৃথিবীর উঠান। আলেকজান্ডার নির্মীত এ দেয়ালের উচ্চতা ২০ মিটার এবং এটি ৩ মিটার (১০ ফুট) পুরু।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
জুলকারনাইন এবং ইসলাম অনুসারে তার নবীত্ব
[সম্পাদনা]অনেকে বলেছেন তিনি নবী ছিলেন। আবার অনেকে বলেছেন তিনি নবী ছিলেন না তিনি ছিলেন আল্লাহ'র একজন অলি এবং ন্যায়পরায়ন বাদশা। আবার ইবনে কাসির তার তাফসীরে ইবনু কাসিরে লিখেছেন: "তিনি যে আল্লাহ তায়ালার সাথে সরাসরি কথা বলেছেন এটা কাসফ বা ইলহাম এর ধারা সম্ভব নয়। হয় তিনি নবী ছিলেন না হয় তার আমলে কোন নবীর উপস্থিতি ছিল"। অনেকে মনে করেন তিনি হজরত খিজির (আ) এর আমলের বাদশাহ ছিলেন এবং খিজির (আলাইহিস সালাম) ছিলেন তার উজির। হজরত ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) সাথে একসাথে হজ্জ করেন।তারপর ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) তার জন্য দোয়া করেন।একদা যুলকারনাইন তার উজির খিজির (আলাইহিস সালাম)নিয়ে একটি অন্ধকার ছন্ন জায়গায় যান এবং সেখানে তার সৈন্য পাঠান একজন ভিতরটা ঘুরে দেখার জন্য কিন্তু তিনি আর ফিরে আসেন না,এরকম আরেকজনকে পাঠান তিনিও একইভাবে ফিরে আসেন না।অতপর তিনি নিজেই তার উজিরকে নিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন এবং একটি অগুন্তুক বিষয়ের রচনা ঘটে তিনি দেখতে পান একজন একটা পাথরের উপর এলটা সিংগা নিয়ে বসে আছেন,তিনি বল্লেন আপনি কে,কিছুক্ষন পর বল্লো উনি স্বয়ং ফেরেশতা ইসরাফিল (আলাইহিস সালাম)। আল্লাহ তায়ালাই সর্বাধিক জ্ঞাত।
জুলকারনাইন সংক্রান্ত হাদীস
[সম্পাদনা]ঐতিহাসিকদের চোখে জুলকারনাইন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ [Esposito, John L. (ed.). "Alexander the Great". The Oxford Dictionary of Islam. Oxford Islamic Studies Online.]
- ↑ ক খ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১০ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০০৯।
- ↑ http://quranandtafsir.com/index.php?option=com_content&view=article&id=18%3Akahf&catid=1%3Aal-quran&Itemid=4&limitstart=9
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ মার্চ ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১।