কুড়া
কুড়া | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Falconiformes (or Accipitriformes, q.v.) |
পরিবার: | Accipitridae |
গণ: | Haliaeetus |
প্রজাতি: | H. leucoryphus |
দ্বিপদী নাম | |
Haliaeetus leucoryphus (Pallas, 1771) | |
প্রতিশব্দ | |
Aquila leucorypha Pallas, 1771 |
কুড়া (Haliaeetus leucoryphus), কুড়ল, কুড়োল বা কোঁড়ল অ্যাক্সিপিট্রিডি (Accipitridae) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃহদাকায় ঈগল।[২] এর ইংরেজি নাম Pallas's Fish Eagle, Pallas's Sea-eagle, Band-Tailed Fish-eagle, বা Ring-tailed Fishing Eagle। সে হিসেবে অনেক সময় এ প্রজাতিটিকে পলাশ মেছো ঈগল, পালাসি কুড়া ঈগল বা নির্ভেজাল প্যালাসেস ফিশ ঈগল নামে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে স্থানভেদে একে ব-ওল, কুড়রা ও কুড়র নামেও ডাকা হয়।[২][৩] এর দ্বিপদ নাম Haliaeetus leucoryphus এর অর্থ হচ্ছে শ্বেতমস্তক সামুদ্রিক ঈগল। Haliaeetus একটি লাতিন শব্দ যার অর্থ সমুদ্র-ঈগল, অন্যদিকে leucoryphus প্রাচীন গ্রীক ভাষা থেকে উদ্ভূত যার অর্থ শ্বেত-মস্তক (leukos, "শ্বেত"+ corypha, "মস্তক") ।
বিশাল এলাকা জুড়ে কুড়ার আবাস হলেও এদের সংখ্যা বেশ কম এবং দিন দিন সংখ্যা কমেই যাচ্ছে। সারা দুনিয়ায় ২৫০০ থেকে ৯৯৯৯টি কুড়া প্রায় ৫২ লক্ষ ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে।[৪] বাংলাদেশে ৫০ থেকে ১০০টি কুড়া রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে কুড়া সংকটাপন্ন প্রজাতি (Vulnerable) কিন্তু বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রজাতি (Critically Endangered)।[২]
বিস্তৃতি
[সম্পাদনা]ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ভুটান, আফগানিস্তান, চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও মঙ্গোলিয়া কুড়া ঈগলের মূল বাসস্থান। নেপালে এরা শীতের পরিযায়ী হয়ে আসে, কিন্তু প্রজনন করে না। তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তানেও এরা প্রজনন করে না, তবে স্থায়ী। সমগ্র উপমহাদেশ, চীন, মঙ্গোলিয়া আর সম্ভবত রাশিয়া এদের মূল প্রজননস্থল।[১] বাংলাদেশে টাঙ্গুয়ার হাওর কুড়া ঈগলের মূল বিচরণক্ষেত্র। সুন্দরবন ও উপকূল অঞ্চলেও এদের দেখা যায়, তবে সংখ্যায় কম।
বিবরণ
[সম্পাদনা]প্রায় শকুনের আকারের। গাঢ় বাদামী সাদা ডানা যা দূর থেকে কালোই মনে হয়। সাদাটে মাথা, ঘাড় ও গলা যা বুকের দিকে যেতে যেতে ফিকে বাদামী থেকে গাঢ় বাদামীতে রূপ নেয়। লেজকে বলা যায় কালো কিন্তু মাঝ বরাবর মস্তবড় সাদা বলয় অথবা সাদা লেজের ডগায় প্রশস্ত কালো বন্ধনী এবং গোড়ার দিকে কালো। লেজ ও ডানার ওড়ার পালক প্রধানত কালো যদিও প্রাথমিক পালকের ভেতরের কয়েকটির উপর সাদা বন্ধনী থাকে। ডানার নিচের ঢাকনি-পালকের অনেকাংশ সাদাটে।
ঠোঁট ও পায়ের পাতা হলুদ যদিও ঠোঁটের ডগা কালচে হতে পারে। ঠোঁট মজবুত এবং এর ডগা বাঁকানো, আকর্ষীযুক্ত। ঠোঁট ও গলা সরু। পায়ের নখর, যাকে বলে ট্যালন (talon) তা খুব শক্ত, বাঁকানো এবং খাদ্যপ্রাণী ধরার জন্য উপযুক্ত। দৃষ্টিশক্তি খুব প্রখর। স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির চেয়ে আকারে বড়। কমবয়েসীরা হালকা বাদামী, পিঠের দিক চিত্র বিচিত্র। দৈর্ঘ্যে ৭৬ থেকে ৮৪ সেন্টিমিটার।[২] পাখার বিস্তার ১৮০-২১৫ সেন্টিমিটার। পুরুষ কুড়ার ওজন ২-৩.৩ কেজি, স্ত্রী কুড়ার ওজন ২.১-৩.৭ কেজি।
প্রজনন
[সম্পাদনা]সাধারণত জলাশয়ের পাশে মাটি থেকে ৩-৪ মিটার উপরে বা বড় গাছে মস্তবড় একটা বাসা বানায় মরা আর কাঁচা ডাল দিয়ে। সর্বশেষ বাসার উপরে কাঁচা পাতার একটা প্রলেপ দেয়। এক জোড়া কুড়া একই বাসা বছরের পর বছর ব্যবহার করে। অনেক সময় বাসার ভারে গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে। তখন এরা পাশের গাছে অথবা দূরে কোথাও চলে যায়। বাসায় ২-৪টি সাদাটে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা হতে লাগে এক মাসের কিছু বেশি। স্ত্রী ও পুরুষ কুড়া সর্বোচ্চ ৪৫ দিন বাচ্চা দেখা শোনা করে। সদ্য শিকার করা খাবার এনে তা ছিঁড়ে ছোট টুকরা করে তা বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাচ্চা কিছুটা শক্তিশালী হবার সাথে সাথে মা-বাবার সাথে সুদূরের উদ্দ্যেশ্যে পাড়ি জমায়।[২][৩]
আচরণ
[সম্পাদনা]এরা অনিয়মিত পরিযায়ী প্রজাতির। প্রধানত মিঠাপানির জলাশয়কে কেন্দ্র করে এদের বিচরণ। এরা ক্রুরর-ক্ররর-ক্রররল স্বরে ডাকে। রাতের প্রহরে প্রহরেও ডাক শোনা যায়। বৃত্তের মত চক্কর দিয়ে শিকার খোঁজে। কুড়া অত্যন্ত দক্ষ শিকারি। গাছের উঁচু ডাল থেকে শিকারকে তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষণ করে। তারপর ছোঁ মেরে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছ বা হাওরে বিচরণকারী জলজ হাঁসের উপর। কুড়া দিনে অন্তত দু'টি হাঁস শিকার করে। শীতের শুরুতে এরা বাসা বাঁধতে শুরু করে।[২]
অস্তিত্বের সংকট
[সম্পাদনা]দিন দিন কুড়ার বিচরণস্থলে মাছের সংখ্যা কমছে। বিশেষ করে এই ঈগলটি যে ধরনের মাছ খায় তার পরিমাণ কমছে। আর বাসা বানাবার জায়গাও দিন দিন কমে আসছে। খাবার ও আবাসস্থল ধ্বংসের পাশাপাশি পানি দূষণও বাড়ছে অধিকহারে। কচুরিপানার বিস্তারের ফলে এদের স্বাভাবিক শিকারপদ্ধতিও ব্যাপকহারে ব্যাহত হচ্ছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ARKive: ছবি ও ভিডিওসমূহ।
- BirdLife Species Factsheet, কুড়া বিষয়ক পাতা। ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে
- মানচিত্র, কুড়ার বিস্তৃতি। ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে
- আইইউসিএন লাল তালিকার সংকটাপন্ন প্রজাতি
- এশিয়ার পাখি
- পরিযায়ী পাখি
- শিকারী পাখি
- ভারতের পাখি
- বাংলাদেশের পাখি
- কাজাখস্তানের পাখি
- রাশিয়ার পাখি
- তাজিকিস্তানের পাখি
- তুর্কমেনিস্তানের পাখি
- উজবেকিস্তানের পাখি
- মঙ্গোলিয়ার পাখি
- চীনের পাখি
- পাকিস্তানের পাখি
- ভুটানের পাখি
- আফগানিস্তানের পাখি
- মিয়ানমারের পাখি
- নেপালের পাখি
- ১৭৭১-এ বর্ণিত পাখি
- পিটার সিমোন পালাস কর্তৃক নামকরণকৃত ট্যাক্সা